চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়েছে নিউরো সার্জারি বিভাগে।
শনিবার রাতভর চবি মেডিকেলের জরুরি বিভাগে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের স্ট্রেচারে করে আনা হয়।
চমেক হাসপাতালে আহতদের নিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থী দিপায়ন দেব জানান, মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া অন্তত তিনজনকে নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র মজলিশের নেতা সাকিব মাহমুদ রুমি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত আশঙ্কামুক্ত থাকলেও তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, আহতদের মধ্যে স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ১৮–১৯ সেশনের আজাদ হোসেন, সাংবাদিকতা বিভাগের ২৩–২৪ সেশনের শাখাওয়াত হোসেন শুভ, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২২–২৩ সেশনের রিপন এবং ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের মোহাম্মদ ইসমাইল আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রিপনের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগায় ড্রেসিং করা হয়েছে। রুমি ও ইসমাইল তুলনামূলক সুস্থ থাকলেও রুমির পায়ে ইটের আঘাতে তীব্র ব্যথা রয়েছে।
এছাড়া আহতদের মধ্যে রয়েছেন— আরবি বিভাগের ফুয়াদ হাসান (২২–২৩ সেশন), আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শাওন (২০–২১ সেশন), ইতিহাস বিভাগের তাহসান হাবিব (১৮–১৯ সেশন), পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আশরাফ রাতুল (২১–২২ সেশন), গণিতের লাবিব (২১–২২ সেশন), ইংরেজি বিভাগের হাসান জুবায়ের হিমেল (২০–২১ সেশন), অর্থনীতির নাহিন মুস্তফা (২০–২১ সেশন), ফারসির মাশনুন (২১–২২ সেশন), ইসলামিক স্টাডিজের আশিক মিয়া (২২–২৩ সেশন), দর্শনের মাহিন (২২–২৩ সেশন), সমাজতত্ত্বের হুমায়ুন কবির (২২–২৩ সেশন), ব্যাংকিংয়ের রিদুয়ান (২১–২২ সেশন), অ্যাকাউন্টিংয়ের রিফাত (২২–২৪ সেশন), রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইয়েন (১৮–১৯ সেশন), ভূগোলের আবির ও তওসিফ (২১–২২ সেশন), ইসলামিক স্টাডিজের শাহরিয়ার ইসলাম শিহাব (২৪–২৫ সেশন) এবং রসায়নের শ্রাবন আহমেদ সাব্বির (১৯–২০ সেশন)।
চবি মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানান, আহতদের বেশিরভাগের শরীরে কাটা-ছেঁড়া ও থেতলে যাওয়ার চিহ্ন রয়েছে। কয়েকজনকে সেলাই দিতে হয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল বলে দাবি করেছেন তারা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রোববারের সব পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষার বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
ঘটনার সূত্রপাত
প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটে এক ছাত্রী তার কক্ষে যেতে দেরি হওয়ায় দারোয়ানের সঙ্গে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে দারোয়ান কয়েকজনকে ডেকে এনে ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে পরে কয়েকজন শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে দারোয়ানকে ধরতে ঘটনাস্থলে গেলে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে আহত হয় অন্তত ১০ জন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সময় মতো বাসায় আসি। আজকেও দেরি করিনি। ১২টার মধ্যে চলে আসি। দারোয়ানকে দরজা খুলতে বলি। তবে তিনি দরজা খুলে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে জোরে ডাক দিলে তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। আমি জবাব দিতে গেলে হঠাৎ আমার গলায় চড় মারেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার রুমমেটরা নামলে তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং লাথি মারতে থাকেন। আমি আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে আমার রুমমেট ও আশপাশের স্থানীয়রা এগিয়ে আসেন।’