টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১৭টি স্থানে ভাঙন ধরেছে। প্লাবিত হয়েছে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৩০ গ্রাম। উপজেলা দুটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগও।
গত ৪৮ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ফেনীতে ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ০.৬৮ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার-শুক্রবারও ফেনী ও আশপাশের এলাকায় মাঝারি থেকে অতিভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে মানুষের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বীজতলা, কৃষি আবাদ, মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন স্থাপনা এবং পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কের কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেকে হাঁটু পরিমাণ পানি দিয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন জনসাধারণ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ফেনী জেলায় ৭ জুলাই সকাল নয়টা থেকে ৯ জুলাই সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বন্যা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে পানি উপচিয়ে বন্যা বাঁধে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। গত ৮ জুলাই রাত আটটায় মুহুরী নদীর পরশুরাম গেজ স্টেশনে পানির লেভেল ১৩ দশমিক ৮৫ মিটার ছিল। বিপদসীমা ১২ দশমিক ৫৫ মিটার, এই সময়ে প্রায় ৭ মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। দীর্ঘ সময় বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী নদীর ডান তীরে জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ ভারত টাই বাঁধের সংযোগস্থল দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বুধবার দুপুর বারোটায় মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট মোবাইল সংযোগ। এতে পানিবন্দি এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন স্বজনরা।
ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশ বন্যা কবলিত হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছেন। ত্রাণ ও দুর্যোগ শাখার সমন্বয়ে জেলা প্রশাসনের একাধিক দল বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বুধবার দুপুর পর্যন্ত তিন উপজেলার প্রায় ১১ হাজার ৫০০ মানুষ দুর্যোগ কবলিত হয়েছেন। এর মধ্যে তিন উপজেলায় ১১৫টি পরিবারের ৩৪৭ জন মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।’
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক নজরদারি রাখা হচ্ছে। এর মধ্যেই বন্যা কবলিত পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় চারশত প্যাকেট শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়া ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, দাগনভূঞা ও ফেনী সদর উপজেলায় ত্রাণ কার্য পরিচালনার ১২০ টন চাল উপবরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।’
দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলার ছয় উপজেলায় ত্রাণ কার্য পরিচালনায় নগদ ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা উপবরাদ্ধ দেয়া হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।