যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যে এক দম্পতির ঘরে জন্ম নিয়েছে এক শিশু-যার ভ্রূণ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সংরক্ষিত থাকা ভ্রূণ থেকে জীবিত সন্তান জন্মের নতুন রেকর্ড।
৩৫ বছর বয়সী লিন্ডসি এবং তার স্বামী ৩৪ বছর বয়সী টিম পিয়ার্স সম্প্রতি তাদের সন্তান থাডিয়াস ড্যানিয়েল পিয়ার্স-এর জন্মের খবর জানান। লিন্ডসি বলেন, ‘আমার পরিবার মনে করে, এটি যেন কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার কাহিনি!’ ভ্রূণটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯৪ সালে, ৬২ বছর বয়সী লিন্ডা আর্চার্ড ও তার তখনকার স্বামীর আইভিএফ চিকিৎসার মাধ্যমে। সে সময় চারটি ভ্রূণ তৈরি হয়েছিল, যার একটি থেকে জন্ম নিয়েছিল লিন্ডার মেয়ে। বাকি তিনটি ভ্রূণ হিমায়িত করে রাখা হয়।
তবে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পরও লিন্ডা সিদ্ধান্ত নেন ভ্রূণগুলো নষ্ট করবেন না। তিনি এগুলো গবেষণার জন্য বা অজানা পরিবারে দান করতেও রাজি ছিলেন না। কারণ, ভবিষ্যতে যদি এসব ভ্রূণ থেকে শিশু জন্মায়, তাহলে তাদের সঙ্গে যেন এক ধরনের জৈব সম্পর্ক থাকে-এটা তিনি চেয়েছিলেন।
বছরের পর বছর ধরে ভ্রূণ সংরক্ষণের জন্য লিন্ডা হাজার হাজার ডলার ব্যয় করেছেন। পরে তিনি যুক্ত হন খ্রিষ্টান ধর্মভিত্তিক একটি ভ্রূণ দত্তক সংস্থা ‘নাইটলাইট ক্রিশ্চিয়ান অ্যাডপশনস’-এর সঙ্গে। সংস্থাটির ‘স্নোফ্লেকস’ নামের একটি প্রোগ্রাম রয়েছে, যেখানে দাতা অভিভাবক তার পছন্দ অনুযায়ী গ্রহণকারী দম্পতি নির্বাচন করতে পারেন।
লিন্ডার শর্ত ছিল-ভ্রূণ যেন যুক্তরাষ্ট্রেই থাকে, কোনো বিবাহিত শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান দম্পতির হাতে যায়। শেষ পর্যন্ত তার ভ্রূণ পিয়ার্স দম্পতির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
টেনেসির ‘রিজয়েস ফার্টিলিটি’ ক্লিনিকে আইভিএফ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। ক্লিনিকটি জানিয়েছে, তারা যেকোনো বয়সের ভ্রূণ স্থানান্তরে আগ্রহী, যদি তা জীবিত জন্মের সম্ভাবনা রাখে।
লিন্ডসি পিয়ার্স বলেন, ‘আমরা কোনো রেকর্ড ভাঙতে চাইনি। শুধু একজন সন্তান চেয়েছিলাম।’ লিন্ডা আর্চার্ড জানিয়েছেন, তিনি এখনও শিশুটিকে সামনে থেকে দেখেননি, তবে ইতোমধ্যে মেয়ের সঙ্গে নবজাতকের মুখের মিল দেখতে পাচ্ছেন।
এই ঘটনা নতুন রেকর্ড গড়লেও, এর আগে ২০২২ সালে জন্ম নেয়া এক যমজ শিশু ছিল সবচেয়ে পুরোনো ভ্রূণ থেকে জন্ম নেয়ার উদাহরণ। সেই ভ্রূণ দুটি হিমায়িত করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। বিশ্বের প্রজনন চিকিৎসা ও জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা বিজ্ঞান, নীতিমালা এবং মানবিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা খুলে দিচ্ছে।